গোল্ডেন রিং
শহীদুল ইসলাম
প্রেম আর বিয়ে এক কথা নয়, সামান্তা এ কথাটাই রুদ্রকে বারবার বলতে চেয়েছে।
প্রেম হলো আবেগময় মুহূর্ত, বিয়েটা পদে পদে বাস্তবতার পাতা উল্টোতে থাকে আর দেখাতে থাকে আর বোঝাতে থাকে এক সময়ের প্রগাঢ় প্রেম আর এক সময়ের জন্য বিতৃষ্ণা। রুদ্র প্রেমটাকে দেখতো আকাশের মতো বড় করে, সেখানে পাখিরা উঁড়ছে, তারারা হাট বসিয়েছে, চাঁদ জনসভা করছে। প্রেমের বিরুদ্ধে কথা তুললে রঙিন রোদেলা আকাশে মেঘ জমতো, বর্ষা হতো। বিয়েটা রুদ্রের জন্য অহিতকর, হিতকর হলো প্রেম।
সামান্তা বিতর্ক প্রবণ নয়, সহজ সরল সাবলিল, রুদ্র সে অর্থে বিপরিত।
রুদ্রর এমবিএ কমপ্লিট। ছোট একটা চাকুরী দরকার। সামান্তারও এমবিএ শেষ। পরিবারের দায়িত্ব মেয়েকে পাত্রস্ত করা।
সামান্তার পরিবারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।
সামান্তার জন্য যোগ্য ছেলে দেখছে। সামান্তা পরিবারে রুদ্রের কথা প্রকাশ করে। রুদ্রকে ডেকে পাঠায় সামান্তার বাবা। রুদ্রকে যতগুলো প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় তাঁর একটারও উত্তর দেবার মতো পরিস্থিতি রুদ্রের ছিল না। দিতেও পারেনি। প্রেমকাল ওদের কেমন কেঁটেছে নির্ভয়ে সেটা বলতে পেরেছে। বৈবাহিক কালের জন্য অর্থ প্রয়োজন অর্থ ছাড়া সংসার অচল।
বিয়ে সম্পর্কে কিছুই বলেনি শুধু সামান্তার দিকে তাঁকিয়ে ছিল। রুদ্র প্রেমিক হয়েছে, প্রেমের স্বপ্ন দেখেছে, স্বামী হবার মতো স্বপ্ন ছিল দুঃস্বপ্ন। আজ স্বামী শব্দের সম্মুখে দাঁড়ান। স্বামী শব্দটার চেয়ে বর শব্দটা ভালো তবে ক্ষণকাল স্থায়ি, স্বামী বেশিকাল স্থায়ী।
সামান্তার কথা ভেবে মিনহাজ উদ্দিন অর্থাৎ সামান্তার বাবা বললো “তুমি একটা চাকুরী করো এবং নিজের পায়ে দাঁড়াও। তোমার সাথেই সামান্তাকে বিয়ে দেব।” তবে মিনহাজ উদ্দিন চাকুরী ছাড়া বেকার ছেলের হাতে কন্যাকে তুলে দেবেন না।
রুদ্রের প্রেম ছিল বৃহত্তর, সামান্তাকে ছোট করে দেখা মানে প্রেমকে ছোট করা।
রুদ্র চাকুরীর সন্ধান করতে লাগলেন, তবে চাকুরী পেলেন না; সুযোগ পেলেন লন্ডনে যাবার। চলেও গেলেন, সাথে করে নিয়ে গেলেন প্রেম আর প্রেম।
সামান্তার পরিবারের সাথে কথা হলো পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে বিয়ে করবে। সামান্তার পরিবার ও সামান্তা সে অপেক্ষায় থাকলো।
সামান্তা একটা চাকুরী নিয়েছে, বেশ দিনকাল কাঁটছে। সামান্তার অফিসেই চাকুরী করে জুবায়ের, তিনি সামান্তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সামান্তা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এবং বন্ধুত্বের তালিকায় নিয়ে আসেন।
এভাবে কেঁটে গেল পাঁচ বছর। লন্ডন থেকে সামান্তার সাথে ফোনালাপ, “সামান্তা। আগামী কাল দেশে ফিরবো, তোর সাথে কবে কোথায় দেখা হবে?”
রুদ্রর দেশে ফেরার কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো।
” সাবধানে আসিস” বললো সামান্তা।
রুদ্র বললো, “সামান্তা একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি, আমি কিন্তু বিয়ে করেছি, আমার ওয়াইফ বাংলাদেশী, ওকে নিয়েই আসবো তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। মেয়েটা ভালো মেয়ে। ভালোর প্রশংসা করতে নেই, আবার না করেও পারা যায় না। তাঁকে দেখেছি গ্রামের আলপথ দিয়ে হেঁটে যেতে, দেখেছি উচ্চ স্বরে হাসতে, কথা বলতে, তাঁকে দেখি প্রতিদিন দেখি, না দেখার মাঝে খুব বেশি দেখি। মাঝে মাঝে দেখি প্রকৃতির অপূর্ব রূপে, আমি বুঝাতে পারবোনা, সব বুঝান যায় না।”
সামান্তা অবাক হয়ে ভাবে রুদ্রের পরিবর্তণ হয়েছে কিন্তু তাই বলে এতটা, নিজেকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
“তুই বিয়ে করলি কবে?” সামান্তা।
“এইতো কিছু দিন হলো। তোর খবর কী বল? নিশ্চই এত দিনে তুইও বিয়ে করে ফেলেছিস? বর কী করে?” রুদ্র।
“রুদ্র, ও একটা কোম্পানিতে চাকুরী করে। তুই দেশে আসলে পরিচয় করিয়ে দেব। তোর ওয়াইফের নামটা তো বললি না?” সামান্তা।
“আমি ওর নাম রেখেছি প্রকৃতি।” রুদ্র।
সামান্তা ভাবতে থাকে মানুষ কত দ্রুত বদলায়? রুদ্র এভাবে বদলে গেল। যে রুদ্র ইংরেজি শুনতে পারতো না। সে আজ স্ত্রীকে বলছে ওয়াইফ।
সামান্তা ফ্রিজ হয়ে যায় কথার স্বর গলা থেকে বের হতে চায় না কিন্তু বের করতে হয়। ” তোর স্ত্রীকে নিয়ে আসিস কথা হবে।”
কিছু আনন্দ বার্তার শরীর জুড়ে দুঃখের কথাই স্পস্ট হয়ে ওঠে।
সামান্তা ফোন কেঁটে জুবায়েরকে ফোন করে এবং বিয়ের কথা বলে। জুবায়ের রাজি হয়ে যায় এবং বিয়ে করে নেয়।
রুদ্র দেশে ফিরলো সামান্তার সাথে বহুদিন পর আবার দেখা। বহুদিন নয় বহু বছর। পাঁচ বছর।
চাকুরী নিলে দেখা হবে না। কথা হবে না। এই ভয়ে রুদ্র চাকুরী নিতে কুন্ঠাবোধ করতো। সেই সামান্তার সাথে পাঁচ বছর পর সামনা সামনি।
সামান্তা তাঁর হাজবেন্টকে নিয়ে রুদ্রের সামনে দাঁড়ানো।
রুদ্র একা দাঁড়ান।
“সামান্তাকে বলে; পাঁচ বছর পর দেখলাম। পাঁচ বছর দেখেছি বুকের তলে জমান খুচরো পয়সার মতো। ইচ্ছে করছে তোকে একবার জড়িয়ে ধরি।”
সামান্তা পরিচয় করিয়ে দেয় “ও জুবায়ের। আমার হাজবেন্ট। তোর স্ত্রী কোথায়?”
রুদ্রের হাতে একটা গোল্ডেন রিং, সামান্তার সামনে তুলে ধরে আর বলে “আমার স্ত্রী।”